Saturday, November 5, 2022

পতঙ্গের উৎপত্তি সম্পর্কে আলোচনা করো

যে কোন প্রাণীর উৎপত্তি ও বিবর্তন সবসময়ই অতীত প্রমানাদি ও তথ্যের উপর নির্ভরশীল। এক্ষেত্রে জীবাশ ও সমকালীন সম্পর্কযুক্ত প্রাণীসমূহের সঙ্গে মিল ও মমিলই সবচেয়ে নির্ভরযােগ্য সূত্র হিসাবে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু পতঙ্গের জীবাশ্মগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্যাদি তেমন সুস্পষ্ট নয়। তাই পতঙ্গের পূর্বসূরী সনাক্তকরণের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা প্রধানত অঙ্গসংস্থানিক, প্রত্নতাত্ত্বিক এবং ভ্ৰণতাত্ত্বিক প্রমানাদির উপর নির্ভর করে থাকেন।

পতঙ্গের উৎপত্তি ও বিবর্তণ সম্পর্কে জানতে হলে প্রথমেই আথ্রোপোডার অতীত ইতিহাস ও জাতিজনি সম্পর্কে জানতে হবে। ক্লার্কের (Clark, 1973) মতে, প্রায় ৫০ কোটি বছর ধরে আথ্রোপােডা পর্বের প্রাণীরা বিবর্তিত হয়ে বর্তমান পর্যায়ে উপনিত হয়েছে। এখন আলােচনার প্রধান বিষয় হচ্ছে, আথ্রোপােডা একজাতিজনিক (Monophyletic) না বহুজাতিজনিক (Polyphyletic) এবং কোন ধরনের পূর্বসূরী থেকে এদের উদ্ভব ঘটেছে। এখনাে পর্যন্ত আদি অ্যানেলিডার কোন গােষ্ঠী থেকে আর্থোপােড়াদের বিভিন্ন ধারার উদ্ভব ঘটেছে বলে মনে করা হয়। তবে, বর্তমানে। এনিলিডা এদের পূর্বপুরুষ নয়। আথ্রোপােডার বিবর্তনের প্রাথমিক দিকে এরা দুটো শাখায় বিভক্ত হয়েছিল। তার মধ্যে একটি শাখা হল বর্তমানের মাকড়সা এবং অন্য। শাখায় ইনসেক্টা, ক্রাস্টাসিয়া সহ আরও কিছু আর্থোপােড। দ্বিতীয় ভাগ পরবর্তীতে মান্ডিবলযুক্ত প্রাণীতে পরিণত হয়। এরা জলজ জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিল। এই জলজ ম্যান্ডিবলযুক্ত প্রাণীগুলাে দুটি শাখার সৃষ্টি করে। একটি শাখা ক্রাস্টাসিয়া এবং অন্যটি মাইরিয়াপােডা। স্থলে বসবাসকারী প্রাণী হতে যে মাইতিয়াপােডার উৎপত্তি সেটি আবার তিনটি গােষ্ঠিতে বিভক্ত হতে দেখা যায়। প্রথম গােষ্ঠি থেকে শতপদী প্রাণীর (Miriapoda) উৎপত্তি হয়; দ্বিতীয় গােষ্ঠি থেকে সিমফাইলা (Symphyla), পাউরােপােডা (Pauropoda), ডিপলােপােডা (Diplopoda) এবং তৃতীয় গােষ্ঠি থেকে ইনসেক্টার (Insecta) উদ্ভব ঘটে।

Arthropoda পর্বের অন্তর্গত শ্ৰেণী সমুহের মধ্যে Insecta শ্রেণীর প্রাণী সবচেয়ে উন্নত। সন্ধিপদী প্রাণীদের মধ্যে কতগুলাে বিষয়ে সামঞ্জস্য দেখা যায় । কিন্তু উৎপত্তির দিক থেকে পতঙ্গের জায়গা ঠিক কোথায় তা নির্ধারণ করতে হলে যেসব প্রাণীর সাথে কোন কোন বিষয়ে পতঙ্গের মিল আছে, সেসব প্রাণী সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান থাকা দরকার। দেহের গঠন প্রক্রিয়া আলােচনা করলে দেখা যায় যে, পতঙ্গের সাথে | অঙ্গুরীমাল প্রাণী (Annelida), অনিকোফোরা (onychophora), ট্রাইলােবাইটা (Toilobita), অ্যারাকনিডা (Arachnida) এবং ক্রাস্টাসিয়ার (crustucea) মিল আছে। এসব প্রাণীর দেহ গঠন প্রণালী আলােচনা করলে এ মিল দেখা যায়।

পতঙ্গদের বিভিন্ন শ্রেণীর প্রাণীর সাথে সামঞ্জস্যতা থাকায় এদের উৎপত্তি নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে অনেক মতভেদ দেখা যায়। ফলে পতঙ্গের উৎপত্তি সংক্রান্ত অনেক মতবাদের সৃষ্টি হয়েছে। এই সকল মতবাদের মধ্যে সবচেয়ে উল্পেগযােগ্য ও প্রচলিত দুইটি মতবাদ নিয়ে সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হলো।

পতঙ্গের উৎপত্তি সংক্রান্ত মতবাদ দুটি নিম্নরূপ
(A) Handlirsch's Trilobite Theory
(B) Tillyard's Theory
(i) Handlirsch's Trilobite Theory-এর উল্লেখযােগ্য দিক গুলাে নিম্নরূপ
(১) সামুদ্রিক Ancestor থেকে পতঙ্গের উৎপত্তি।
(২) Trilobite এর পার্শ্বীয় লােব পতঙ্গের পাখার সঙ্গে তুলনীয়।
(৩) এক জোড়া শুঙ্গ যা Trilobite ও পতঙ্গ উভয়ে উপস্থিত।
(৪) Trilobite-র দ্বিশাখ উপাঙ্গ থেকে পতঙ্গের রূপান্তরিত উপাঙ্গের সৃষ্টি।
এই মতবাদ অনুযায়ী পক্ষল পতঙ্গগুলি Trilobite থেকে উৎপত্তি লাভ করে এবং অপক্ষল পতঙ্গ এদের দ্বিতীয় শুরে অভিযােজন।
(ii) Tillyard's Theory-র উল্লেখযােগ্য দিকগুলাে নিম্নরূপঃ
(১) Myriapoda থেকে সিলুরিয়ান পিরিয়ডে Protoptera-র উৎপত্তি ।
(২) এই Protoptera তখন দুই ধরণের ছিল । যথা- (i) Progoneata, (ii) Ophisthogoneata |
(৩) Tilliard-এর মতে Ophisthogoneata থেকে প্রধান দুটি শাখার সৃষ্টি হয়। ১টি শাখার Chilopoda ও Schizotarsataএর ও অন্য শাখায় Collembola ও Protura | যাদেরকে Insecta-এর প্রাথমিক ধাপ হিসেবে ধরা হয়।
(৪) Collembola ও protura থেকে পরবর্তীতে Thysanura ও Diplura-এর | সৃষ্টি হয় এবং এদের থেকে পরে Pterygote Insect-এর উদ্ভব ঘটে।

Tillyard-এর মতবাদটি সমালােচনা করলে দেখা যায় যে, এক্ষেত্রে। | Ophiothogoneata থেকে প্রথমে অপক্ষল পতঙ্গের সৃষ্টি হয় এবং পরবর্তীতৈ পক্ষ পতঙ্গের সৃষ্টি হয়েছে। যা Handlirsch's Trilobite Theory-এর বিপরীত। আর। Pterygote পতঙ্গের মাঝে যে সমস্ত অপক্ষল পতঙ্গ দেখা যায় (যেমন-পিপড়া, উকুন, ছারপােকা ইত্যাদি) তা তাদের জীবন ধারণের জন্য মাধ্যমিক অভিজোযন।

পতঙ্গের উৎপত্তি ও বিবর্তন সংক্রান্ত ধাপগুলাে নিম্নে বৈখিক চিত্রের মাধ্যমে তলে । ধরা হলাে


 পতঙ্গের বিবর্তনে তাদের পূর্বসূরী সনাক্তকরণের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা প্রধানত অঙ্গসংস্থানিক, প্রত্মতাত্ত্বিক এবং দ্রুণতাত্ত্বিক প্রমানাদির উপর নির্ভর করে থাকেন।

অঙ্গসংস্থানিক বৈশিষ্ট্য পর্যালােচনা করলে দেখা যায় যে, আদি পতঙ্গরা পাখাবিহীন ছিল যা বর্তমানে apterygota পতঙ্গদের সাথে বেশ সামঞ্জস্যপূর্ণ।

পক্ষল পতঙ্গের উৎপত্তি পতঙ্গের বিবর্তনের প্রথম ধাপ হিসেবে বিবেচ্য। দ্বিতীয় ধাপ হচ্ছে দেহের সঙ্গে পতঙ্গের ডানার সংযুক্তি। এছাড়া সম্মুখ ও পশ্চাৎভানার সংযুক্তির ফলে পতঙ্গ তার ডানাদ্বয়কে স্বচ্ছন্দে সঞ্চালন করতে পারে এবং বাতাসের দিক নির্ণয় করে প্রয়ােজন অনুযায়ী তাদের নির্দিষ্ট দিক অনুসরণ করতে পারে।

ভ্ৰণতাত্ত্বিক অভিযােজন পতঙ্গে বিবর্তনের তৃতীয় ও বৃহৎ ধাপ হিসেবে বিবেচিত হয়। এই পর্যায়ে পতঙ্গের জীবনচক্রে লার্ভা ও পিউপা দশার উদ্ভবসহ জটিল ধরণের রূপান্তর পরিলক্ষিত হয়।

উপরােক্ত তিনটি প্রধান অভিযােজনিক ধাপ পর্যালােচনা করলে প্রাণীভৌগলিক সময়পঞ্জী হিসেবে Palaeozoic period-এ পৃথিবীতে প্রথম অপক্ষল পতঙ্গের উদ্ভব ঘটে বলে মনে হয়। এই সময় পতঙ্গ গুলাে আকারে বেশ বড় ছিল। তবে প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমানাদি থেকে তখনকার সময়ের পতঙ্গ সম্পর্কে খুব বেশী তথ্য পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে Mesozoic Era-তে পতঙ্গদের মধ্যে ব্যাপক আকারে অভিযােজনিক পরিবর্তন হয়। এই সময়ই বর্তমানের বিভিন্ন বর্গের পতঙ্গের পুর্বসূরীদের উদ্ভব ঘটে। বর্তমান Cenozoic Era-তে সামাজিক পতঙ্গের জীবনে অভিযােজনীক রূপান্তর পরিলক্ষিত হয়। এই Era তে Coleopteran পতঙ্গদের বিস্তৃতি প্রকট আকার ধারণ । করে এবং তা বর্তমানেও অব্যাহত রয়েছে।

নিম্নে প্রাণিভূতাত্তিক সময়পুঞ্জী হিসেবে পতঙ্গের উদ্ভব, বিস্তার ও অভিযােজন। সংক্রান্ত তথ্য ছক আকারে তুলে ধরা হলাে।

0 comments:

Post a Comment